থ্রেডিং, ওয়াক্সিং এর যন্ত্রণা ছাড়াই মুখের লোম তোলার ঘরোয়া উপায়

মুখের অবাঞ্ছিত লোম অনেকের জন্যই বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। সৌন্দর্যের প্রতি যত্নশীল মানুষ, বিশেষ করে নারীরা, এই সমস্যার সমাধানে নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। থ্রেডিং, ওয়াক্সিং, বা লেজার ট্রিটমেন্টের মতো পদ্ধতি জনপ্রিয় হলেও, এগুলোতে ব্যথা ও খরচ বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই ঘরোয়া পদ্ধতির দিকে ঝোঁকেন। মুখের লোম দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো প্রাকৃতিক, ব্যথাহীন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খরচ সাশ্রয়ী।



ঘরোয়া উপায়ে মুখের লোম দূর করার প্রধান পদ্ধতি সমূহ  :

১. মধু ও লেবুর প্যাক :

মধু ও লেবুর মিশ্রণ মুখের লোম দূর করার কার্যকর একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।

উপকরণ:

২ টেবিল চামচ মধু

১ টেবিল চামচ লেবুর রস

পদ্ধতি:

মধু ও লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

মিশ্রণটি মুখে প্রয়োগ করুন।

২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন ।


কার্যকারিতা:

লেবুর প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট এবং মধুর আঠালো গুণ লোম তুলে আনতে সাহায্য করে। এটি ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে।


২. ডিমের সাদা অংশ ও কর্নফ্লাওয়ার :

ডিমের সাদা অংশ একটি প্রাকৃতিক পিলিং মাস্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।

উপকরণ:

১ টি ডিমের সাদা অংশ

১ টেবিল চামচ চিনি

১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার

পদ্ধতি:

ডিমের সাদা অংশের সাথে চিনি ও কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

মিশ্রণটি মুখে প্রয়োগ করুন এবং শুকাতে দিন।

শুকানোর পর ধীরে ধীরে মাস্কটি টেনে উঠিয়ে নিন।


কার্যকারিতা:

এই পদ্ধতিতে মুখের পাতলা লোম সহ মৃত কোষ সহজেই দূর হয়।


৩. বেসন ও হলুদের প্যাক :

প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের যত্নে বেসন ও হলুদ ব্যবহার করা হয়।

উপকরণ:

২ টেবিল চামচ বেসন

১/২ চা চামচ হলুদ

পরিমাণমতো দুধ বা পানি

পদ্ধতি:

সব উপকরণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

এটি মুখে লাগিয়ে শুকাতে দিন।

শুকানোর পর আলতো করে ঘষে তুলে ফেলুন।


কার্যকারিতা:

বেসন লোম টেনে বের করতে সাহায্য করে, আর হলুদ ত্বক উজ্জ্বল ও জীবাণুমুক্ত রাখে।


৪. চিনি ও লেবুর স্ক্রাব :

চিনি একটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েট হিসেবে কাজ করে এবং লোম তুলতে সাহায্য করে।

উপকরণ:

২ টেবিল চামচ চিনি

১ টেবিল চামচ লেবুর রস

পরিমাণমতো পানি

পদ্ধতি:

চিনির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সামান্য গরম করুন।

মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে মুখে লাগান।

শুকানোর পর আলতো করে স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন।


কার্যকারিতা:

এই পদ্ধতিতে মুখের অবাঞ্ছিত লোম তুলতে সহজ ও কার্যকরভাবে সাহায্য করে।


৫. ওটমিল ও কলার প্যাক :

ওটমিলের প্রাকৃতিক দানাদার গঠন লোম তুলতে সহায়ক।

উপকরণ:

১ টেবিল চামচ ওটমিল

১/২ টি পাকা কলা

পদ্ধতি:

ওটমিল ও কলা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে স্ক্রাব করুন।

তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।


কার্যকারিতা:

ওটমিল ত্বক থেকে লোম তুলে ফেলার পাশাপাশি ত্বক নরম রাখে।


৬. আলু ও মসুর ডালের প্যাক :

আলুর রস এবং মসুর ডাল লোম তুলতে অসাধারণ কার্যকর।

উপকরণ:

১ টি আলুর রস

১ টেবিল চামচ মসুর ডালের গুঁড়ো

১ চা চামচ লেবুর রস


পদ্ধতি:

সব উপকরণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

এটি মুখে প্রয়োগ করে শুকাতে দিন।

শুকানোর পর আলতোভাবে ঘষে তুলে ফেলুন।


কার্যকারিতা:

এই পদ্ধতিতে ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল হয় এবং লোম তুলতে সহায়তা করে।


ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা :

সুবিধা:

1. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারে ত্বকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।

2. খরচ কম এবং সহজলভ্য উপকরণ।

3. পদ্ধতিগুলো সম্পূর্ণ ব্যথাহীন।

4. ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়।


সীমাবদ্ধতা:

1. লোম দূর করার জন্য নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করতে হয়।

2. পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা ধীরগতির।

3. গভীর ও মোটা লোম তুলতে এটি অল্প কার্যকর ।


পরামর্শ ও সতর্কতা :

প্যাক বা মিশ্রণ ব্যবহারের আগে ত্বকে এলার্জি পরীক্ষা করুন।

ত্বক পরিষ্কার করে প্রয়োগ করুন।

মুখে খুব বেশি ঘষাঘষি করবেন না।

প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।


ঘরোয়া পদ্ধতিতে মুখের লোম তোলার উপায়গুলো প্রাকৃতিক ও নিরাপদ। যদিও এ পদ্ধতি গুলোতে সময় লাগে, তবে নিয়মিত ব্যবহারে স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব। বাজারের কেমিক্যাল যুক্ত পণ্য বা ব্যথাযুক্ত পদ্ধতির পরিবর্তে ঘরোয়া এই পদ্ধতিগুলো সবার জন্য সহজ ও আরামদায়ক বিকল্প হতে পারে।


Comments

Popular posts from this blog

শীতকালে ত্বকের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

শীতে ত্বক কোমল রাখার উপায়

মুখের মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়