মুখের মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মুখের মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়: একটি বিস্তারিত আলোচনা :
মেছতা (Melasma) হল একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা যেখানে মুখে গাঢ় দাগ বা পিগমেন্টেশন দেখা দেয়। এটি সাধারণত মুখের গাল, কপাল, নাকের উপর, এবং ঠোঁটের উপরের অংশে হয়। মেছতার জন্য হরমোনাল পরিবর্তন, অতিরিক্ত সূর্যের আলো, ত্বকের যত্নের অভাব, বা জিনগত কারণ দায়ী হতে পারে। ঘরোয়া কিছু সহজ পদ্ধতিতে মেছতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিচে তেমনই কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মুখের মেছতা |
১. লেবুর রস ব্যবহার :
লেবুর রসে প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান রয়েছে যা মেছতার দাগ হালকা করতে সহায়ক।
পদ্ধতি:
একটি তাজা লেবু কেটে রস বের করুন।
তুলোর সাহায্যে মেছতার উপর লাগান।
১০-১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
সতর্কতা :
লেবুর রস ব্যবহারের পর ত্বকে সরাসরি সূর্যের আলো পড়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ত্বক সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
২. অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার :
অ্যালোভেরা ত্বক ঠাণ্ডা রাখতে এবং কালো দাগ দূর করতে সহায়ক। এটি ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে কার্যকর।
পদ্ধতি:
অ্যালোভেরা পাতা থেকে তাজা জেল বের করুন ।
এটি মেছতার দাগের উপর লাগান।
২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিদিন ব্যবহার করুন ভালো ফলাফলের জন্য।
৩. হলুদ ও দুধের মিশ্রণ :
হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি - ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-পিগমেন্টেশন বৈশিষ্ট্য যুক্ত। দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বক উজ্জ্বল করে।
পদ্ধতি:
১ চামচ হলুদের গুঁড়া এবং ২ চামচ দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
মেছতার স্থানে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন।
হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৪. আলুর রস :
আলুতে থাকা ক্যাটেকোলেস নামক একটি উপাদান ত্বকের পিগমেন্টেশন হালকা করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
একটি আলু মাঝখান থেকে কেটে নিন।
আলুর টুকরাটি মেছতার স্থানে ঘষুন।
শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই পদ্ধতি প্রতিদিন ১-২ বার অনুসরণ করতে পারেন।
৫. মধু ও দারুচিনির প্যাক :
মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং দারুচিনি অ্যান্টি - ইনফ্লেমেটরি।
পদ্ধতি:
১ চামচ মধু এবং ১/২ চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন ।
এটি মেছতার দাগে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
৬. টমেটোর রস :
টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বক উজ্জ্বল করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
একটি টমেটোর রস বের করে তুলোর সাহায্যে মেছতার উপর লাগান।
১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
টমেটোর রস ব্যবহারের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৭. পেঁপে ও মধুর প্যাক :
পেঁপেতে থাকা এনজাইম (প্যাপেইন) ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে এবং পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
পাকা পেঁপে চটকে এতে ১ চামচ মধু মেশান।
মিশ্রণটি মেছতার স্থানে লাগান।
২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৮. গ্রিন টি ব্যাগ :
গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ ঠাণ্ডা করে মেছতার স্থানে ১০-১৫ মিনিট রাখুন।
প্রতিদিন এটি ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ হালকা হবে।
৯. ভিনেগার এবং পানি মিশ্রণ :
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ত্বকের অতিরিক্ত পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক।
পদ্ধতি:
১ ভাগ ভিনেগার এবং ১ ভাগ পানি মিশিয়ে নিন।
এটি তুলোর সাহায্যে মেছতার উপর লাগান।
শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
১০. নারকেলের তেল :
নারকেলের তেল ত্বকের পিগমেন্টেশন হালকা করতে এবং ত্বক মসৃণ রাখতে সহায়ক।
পদ্ধতি:
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মেছতার স্থানে নারকেলের তেল মালিশ করুন।
সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
মেছতা প্রতিরোধে টিপস:
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি মেছতা বাড়াতে পারে। প্রতিদিন ৩০ SPF বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: পানি ত্বক আর্দ্র রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।
পুষ্টিকর খাবার খান: ভিটামিন C এবং E সমৃদ্ধ খাবার ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
মুখ পরিষ্কার রাখুন: প্রতিদিন ২ বার মুখ ধুয়ে ত্বক পরিষ্কার রাখুন।
উপসংহার :
মেছতা দূর করার জন্য ধৈর্য ধরে ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরের প্রতিকার গুলো প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য। তবে যদি মেছতা খুব বেশি হয় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাজ না করে, তবে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ত্বকের যত্ন নিলে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে মেছতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
Comments
Post a Comment