মুখে মাখুন ঘরে তৈরি করা গ্লিসারিন

মুখে মাখুন ঘরে তৈরি করা গ্লিসারিন: 

গ্লিসারিন কী এবং এর ব্যবহার :

গ্লিসারিন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা সাধারণত বিভিন্ন প্রসাধনী এবং ত্বকের যত্নের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। গ্লিসারিন প্রধানত সবজি বা প্রাণীজ উৎস থেকে তৈরি হয় এবং এটি রঙহীন, গন্ধহীন ও মিষ্টি স্বাদের তরল।প্রাকৃতিক গ্লিসারিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা প্রবেশ করাতে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। ঘরে তৈরি গ্লিসারিন ব্যবহার করে আপনি রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতেও পারবেন।


গ্লিসারিন তৈরির প্রক্রিয়া (ঘরে সহজ উপায়ে) :

ঘরে গ্লিসারিন তৈরি করার জন্য বিশেষ কোনও জটিল সরঞ্জাম বা উপাদানের প্রয়োজন নেই। এখানে একটি সহজ পদ্ধতি দেওয়া হলো:


উপকরণ:

1. নারকেলের তেল বা পাম তেল – ১ কাপ

2. জল – ১/২ কাপ

3. দারুচিনি বা লেবুর খোসা – স্বাদ মতো (গন্ধ যোগ করার জন্য)

4. ক্ষার জাতীয় উপাদান (সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত সোডা অ্যাশ) – ১ চা চামচ

5. ভিনেগার – ১ টেবিল চামচ


তৈরির প্রক্রিয়া:


1. একটি পাত্রে নারকেলের তেল গরম করুন।

2. এতে সোডা অ্যাশ যোগ করে ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন।

3. জল এবং ভিনেগার মিশিয়ে একটি সমান মিশ্রণ তৈরি করুন।

4. যখন মিশ্রণ ঘন হয়ে আসবে, তখন দারুচিনি বা লেবুর খোসা যোগ করে নামিয়ে নিন।

5. এটি ঠান্ডা হলে গ্লাসের বোতলে সংরক্ষণ করুন।


ঘরে তৈরি গ্লিসারিনের ত্বকের জন্য উপকারিতা :

১. ত্বক নরম ও মসৃণ রাখে :

গ্লিসারিন ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ফলে শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক সহজেই নরম হয়ে যায়। এটি ত্বকের উপর একটি প্রাকৃতিক প্রটেকটিভ লেয়ার তৈরি করে।


২. বলিরেখা ও বার্ধক্য রোধে কার্যকরী :

গ্লিসারিন ত্বকের অভ্যন্তরে জল ধারণে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। নিয়মিত ব্যবহার বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।


৩. ব্রণ দূর করে :

গ্লিসারিন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি - ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ। এটি ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখে এবং ব্রণের প্রবণতা কমায়।


৪. দাগ দূর করে :

ব্রণ বা অন্য কোনো কারণে ত্বকে সৃষ্ট দাগ দূর করতে গ্লিসারিন বিশেষভাবে কার্যকরী। এটি ত্বকের টোন সমান করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।


৫. শীতকালে ত্বকের রুক্ষতা দূর করে :

শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ঘরে তৈরি গ্লিসারিন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। এটি ত্বকের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।


গ্লিসারিন ব্যবহার করার পদ্ধতি :


১. গ্লিসারিন এবং গোলাপজল মিশ্রণ:

১ টেবিল চামচ গ্লিসারিনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগান।

এটি একটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে।


২. মধু ও গ্লিসারিনের প্যাক:

১ চামচ মধু ও ১ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে লাগান।

এটি ত্বককে গভীর থেকে পুষ্টি জোগাবে।


৩. লেবুর রস ও গ্লিসারিন:

১ চা চামচ গ্লিসারিনের সঙ্গে ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণের দাগের উপর ব্যবহার করুন।

৪. ময়েশ্চারাইজার হিসেবে সরাসরি ব্যবহার:

মুখ পরিষ্কার করে সামান্য গ্লিসারিন তুলোতে নিয়ে সরাসরি মুখে লাগান।


গ্লিসারিন ব্যবহারে সতর্কতা :


ঘরে তৈরি গ্লিসারিন সাধারণত নিরাপদ হলেও কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:

1. অতিরিক্ত গ্লিসারিন ব্যবহার ত্বকে আঠালো ভাব আনতে পারে।

2. সরাসরি রোদে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এটি ত্বককে সূর্যের আলোতে সংবেদনশীল করতে পারে।

3. যদি ত্বকে কোনো অস্বস্তি বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা যায়, তবে ব্যবহার বন্ধ করুন।

4. ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ব্যবহার করুন—অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে গ্লিসারিন কম ব্যবহার করা উচিত।


গ্লিসারিনের অন্যান্য উপকারিতা :

গ্লিসারিন শুধু মুখের জন্য নয়, সারা শরীরের জন্য উপকারী। এটি ঠোঁট ফাটা, চুলের রুক্ষতা এবং হাত-পায়ের শুষ্কতা ও দূর করতে সাহায্য করে।


১. চুলের জন্য গ্লিসারিন:

গ্লিসারিন চুলে প্রয়োগ করলে চুল নরম ও মসৃণ হয়।

১ টেবিল চামচ গ্লিসারিন, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, এবং ১ কাপ জল মিশিয়ে চুলে লাগান।


২. ঠোঁটের যত্নে গ্লিসারিন:

ঠোঁট ফাটা রোধ করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন লাগান।

এটি ঠোঁটের ময়েশ্চার ধরে রাখবে।


ঘরে তৈরি গ্লিসারিন প্রকৃতি-প্রদত্ত একটি দারুণ উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর। এটি ব্যবহারে আপনি রাসায়নিক পণ্য থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন এবং ত্বককে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পারবেন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, শুষ্কতা দূর করে এবং একটি উজ্জ্বল, কোমল ত্বক উপহার দেয়।ঘরে তৈরি এই প্রাকৃতিক সমাধান ব্যবহার করে নিজের ত্বকের যত্ন নিন এবং সুন্দর থাকুন।


Comments

Popular posts from this blog

শীতকালে ত্বকের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

শীতে ত্বক কোমল রাখার উপায়

মুখের মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়